শেখ রেজাউল করিম রনি ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি ।
প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভা।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এহেতাশামুল আলম। স্বাধীনতার মাস মার্চের শুরু থেকেই প্রতীক্ষায় ছিল শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহ। তবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আরও প্রায় মাসখানেক আগেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে শুধু নেতাকর্মীরাই নন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার মানুষের ছিল অধীর অপেক্ষা। অবশেষে শনিবার (১১ মার্চ) তাদের প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়।
আরও পড়ুন: ১০৩ টি প্রকল্পের উদ্বোধন কী ধ্বংসের নমুনা?, ময়মনসিংহের জনসমুদ্রে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর এদিন তখনও আলো ফুটেনি ময়মনসিংহ নগরীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা দুপুর ২ টা থেকে শুরু হবে জানা থাকলেও ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে ভোর থেকেই ভিড় করতে থাকেন লোকজন। ট্রেন, বাস, নৌকা, রিকশা, অটো রিকশা এমনকি ট্রাক চেপেও এসেছেন তাঁরা। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে এসেছেন জনসভাস্থলে। এটিই বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য ময়মনসিংহের আপামর জনসাধারণের নিখাদ ভালোবাসার উদাহরণ।
আবার কেউ কেউ আগের রাতেই এসেছিলেন ময়মনসিংহ নগরীতে। শনিবার বেলা বাড়তেই কানায় কানায় ভরে ওঠে সার্কিট হাউজ মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা। একের পর এক আসতে থাকে খন্ড খন্ড মিছিল। মুহুমুর্হু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। জনসভার জন্য চালু করা হয় বিশেষ ট্রেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না গোটা নগরীতে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকেই নতুন বাজারসহ আশপাশ এলাকায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন।
আরও পড়ুন : উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত ময়মনসিংহ; ১০৩ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর
নান্দাইল উপজেলা শেরপুর ইউনিয়ন থেকে এসেছেন একদিন আগেই চলে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মমতাজ বেগম প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের জানান ‘শেখের বেটিকে একনজর দেখার জন্য এসেছি। জীবনে এতো মানুষ কখনও দেখিনি। এবার নিজ চোখে দেখে গেলাম। এই এলাকার মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছু করেছেন। আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। মনের আশা পূরণ করতেই শেখের বেটিকে দেখতে এসেছিলাম। এখন হাসিমুখে বাড়ি ফিরবো।’
আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের অঙ্গীকার ও দীপু মনির আশাবাদ জনসভাকে ঘিরে গোটা নগরীতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। নগরীর মোড়ে মোড়ে বসে নিরাপত্তা চৌকি। পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়। নিরাপত্তার খাতিরে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য রাখা হয়েছিল। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও পুলিশ সদস্য আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ মঞ্চের প্রথম সারিতে নিরাপত্তায় ছিল এপিবিএন। নিরাপত্তার প্রশ্নে ছিল আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি।’
জনসভায় এতো মানুষ দেখে অভিভূত ফুলপুর থেকে আসা সমাজকর্মী জুলফিকার ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের জনসভা ইতিহাস করেছে। স্থানীয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও সম্ভবত এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে অবাক হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে সকাল থেকেই মিছিলের নগরীতে রূপ নেয় আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ময়মনসিংহ। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা নগরী। নেতাকর্মীদের গায়ে ছবি সম্বলিত নানা রঙের গেঞ্জিতে পুরো জনসভাস্থল হয়ে ওঠে রঙিন। এছাড়া সার্কিট হাউজ মাঠের আশপাশ, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়ক ছেয়ে যায় ব্যানার, তোরণ আর বিলবোর্ডে। জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠে নির্মাণ করা হয় বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ। রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয় গোটা মাঠ।
সকাল থেকেই বাদ্য বাজিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলের দিকে আসতে থাকেন। আর ময়মনসিংহের বাইরের উপজেলা থেকে বাস-ট্রাক ও ট্রেনে করে নগরীতে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এরপর পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে তারা জনসভাস্থলে যান। জনসভায় বিশাল শোডাউন করেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমান্ড।
শোডাউন করেছে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।